একদিন সব হেফাজতে মৃত্যু ও হত্যার বিচার হবে



ঢাকা মহানগর দায়রা আদালত ৯ সেপ্টেম্বর নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩-এর অধীনে একটি মামলায় পুলিশের তিন সদস্যকে যাবজ্জীবন এবং দুজন কথিত ‘সোর্স’কে সাত বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। এ আইনের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্যের আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম।

ড. শাহদীন মালিক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এবং ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের আইনের শিক্ষকের লেখায় – ইদানীং প্রায় প্রত্যেক আইজিপির দায়িত্ব পালনকালে কয়েক শ নাগরিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। এসব হত্যাকে আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নাম দিয়েছি: ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার, বন্দুকযুদ্ধ, আত্মরক্ষা এবং আরও কত কিছু। আমরা বহু বছর ধরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা করছি, লেখালেখি হচ্ছে প্রচুর, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো সরকারকে বিচারবহির্ভূত হত্যা থেকে সরে আসতে আহ্বান জানিয়ে জানিয়ে ক্লান্ত হয়ে গেছে। মেজর (অব.) সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর আজ পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ আছে। ফলে এখন এটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে এসব হত্যাকাণ্ডের বেশির ভাগই ছিল পূর্বপরিকল্পিত। ক্রসফায়ারে দেওয়ার হুমকি দিয়ে কত যে পুলিশি চাঁদাবাজি হয়েছে, তার হিসাব কেউ হয়তো মেলাতে পারবে না। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে অত্যাচার, অবিচার, অন্যায়, জুলুম, নির্যাতন ও পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে মামলা শুরু হয়ে গেছে। আজ হোক কাল হোক, এই মামলাগুলো যে হবেই, সেটা বহু বছর ধরেই জানা ছিল। পৃথিবীর বহু দেশেই এ রকম ঘটনা ঘটেছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অংশবিশেষ বেপরোয়া হয়ে পড়েছিল। দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছিলেন বহু নাগরিক। আর হতাশার জায়গা হলো যখন মন্ত্রীদের সকাল–বিকেল ঘোষণা দিতে হয় ‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না’, তখনই আমরা বুঝে ফেলি যে এ দেশে অনেকেই আইনের ঊর্ধ্বে। মন্ত্রীদের ঘোষণার চেয়ে ৯ সেপ্টেম্বরের রায়ের ঘোষণা অনেক বেশি বজ্রকণ্ঠ। আশা করি, নির্যাতন ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যুর শিকার ব্যক্তি বা তাঁদের নিকটাত্মীয়রা রায়ের এই বজ্রকণ্ঠে সাহসী হবেন আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যেসব সদস্য এত দিন ধরে এসব অপরাধ করেছেন, তাঁরা বিচারের ঊর্ধ্বে থাকবেন না। একদিন না একদিন তাঁদের বিচার ও দণ্ড হবে।


ড. জাহিদ দেওয়ান শামীম, এমবিবিএস, পিএইচডি
সিনিয়র সাইন্টিস্ট,
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিকেল

Leave a comment

Design a site like this with WordPress.com
Get started