ধর্ষন, নারীবাদী সুশীল সমাজ ও প্রতিরোধ

ফাইল ফটো

ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যাধি। নারীদের একার সমস্যা নয় এটা। কেননা, কোন পুরুষের বোন, স্ত্রী এবং মা’ই এই ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, আর সেখানে পুরুষ ধর্ষকের বিরুদ্ধে এবং নারীর পক্ষেই সোচ্চার হয়ে ওঠে। তাই, আবারও বলছি ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যাধি। বর্তমান সময় তা ভয়ংকর রুপ নিয়েছে সারাবিশ্বে তথা বাংলাদেশে। কোন ভাবেই রাষ্ট্র এর দায় এড়াতে পারে না। তবে ধর্ষণ প্রতিরোধে কি করা প্র‍য়োজন আর আমরা কি কি করছি?

ধর্ষণ প্রতিরোধে বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ করছে নানা মানুষ। তবে ধর্ষণের প্রতিরোধে একধরনের মিথস্ক্রিয়া ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। প্রতিবাদের প্রক্রিয়াও নানা ভাবে বিতর্কিত।

পুরুষের একাংশ দাবী তুলছে, নারীরা পুরুষের সাথে অবাধ মেলামেশা বন্ধ ও বোরকা–হিজাব তথা শালীন পোশাক পড়লেই ধর্ষণের হার কমে যাবে। অপরদিকে একদল নারী দাবী করছে পুরুষের দৃষ্টিতে সমস্যা। নারীরা যে পোশাকই পরিধান করুক না কেন পুরুষরা যদি নারীদের প্রতি দৃষ্টি অবনত রাখে তাহলেই ধর্ষণের হার কমবে। তাদের দাবী, যদি শালীন পোষাক পড়লে ধর্ষণের হার কমে তাহলে শিশু ও বৃদ্ধ বয়সী নারী কেন ধর্ষণের শিকার হচ্ছে? এটিও যুক্তিযুক্ত।

সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে যা দেখে নির্ধিদ্বায় বলা যায়, সমাজের পচন ধরেছ আর মানুষ হয়ে পড়েছে বিকারগ্রস্থ জানোয়ার। কেননা, ধর্ষণের ঘটনা গুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জনসাধারণ থেকে শুরু করে মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত, গীর্জার ফাদার, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসার শিক্ষক, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট, ক্ষমতাসীন ও রাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্তরা কেউ-ই বাদ যায় নি এই ঘৃণিত অপকর্ম থেকে। এমনকি নারীবাদী নেতা-কর্মীরাও এই ঘৃণিত অপকর্মের সাথে যুক্ত। যারা সর্বদা নারীদের অধিকার আদায়ের জন্য সোচ্চার থাকে।

এবার আসুন, নারীর পোশাক ও অবাধ মেলামেশা ধর্ষণ বা গণধর্ষণের জন্য যতটুকু দায়ী, ঠিক বিকারগ্রস্ত পুরুষের দৃষ্টি ও মাদকাসক্তরা তততুটুই দায়ী। বর্তমান সমাজে নারীদের ভোগ্যপণ্য করে তোলার চরম প্রতিযোগিতায় নেমেছে একটি মহল, আর এটির নামও দিয়েছে নারীর সম-অধিকার।

নারী স্বাধীনতা পেলে কি ধর্ষণের হার কমে যাবে? নারী স্বাধীনতায় ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলো সবচেয়ে এগিয়ে। তবে সেখানে কি ধর্ষণের হার কম? বরং ধর্ষণের রোল মডেল হিসেবে দাড়িয়েছে ইউরোপ-আমেরিকা। আপনি কি জানেন?

UN World Population Prospect 2020 – অনুযায়ী, দক্ষিণ আফ্রিকায় ধর্ষণের হার ১৩২.৪০%( প্রতি ০১ লক্ষ নারীতে ১৩২.৪০ নারী), বোতসোয়ানায় ধর্ষণের হার ৯২.৯০%, একইভাবে লেসোথে ৮২.৭%, সোয়াজিল্যান্ডে ৭৭.৫%, বারমুডাতে ৬৭.৩%, সুইডেনে ৬৩.৩%, সুরিনামে ৪৫.২%, কোস্টারিকায় ৩৬.৭%, নিকারাগুয়ায় ৩১.৬%, গ্রানাডায় ৩০.৬% অস্ট্রেলিয়াতে ২৮.৬০% এবং যুক্তরাষ্ট্রে ২৭.৩%।

তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় বাংলাদেশে ধর্ষণের হার বেড়ে এখন ৯.৮২%।

একইভাবে মধ্যেপ্রাচ্যের দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র যা রীতিমতো অবাক করার মত। কাতার, আরব আমিরাত, তুরস্ক, সিরেয়া লিওন, সিরিয়া, আলবেনিয়া, সার্বিয়া, তুর্কিমিনিস্তান, লেবানন, তাজিকিস্তান, আজারবাইজান, মোজাম্বিক ও মিশরে ধর্ষণের হার ০.১-২% এর মধ্যে। এইদেশসমূহের জন্য নারীর পোশাকের কি প্রভাব ফেলে নি?
এখানে নারীর সম-অধিকার ছিল? আমি বলব এখানে নারীর সম-অধিকার ছিল না, এখানে নারীর মর্যাদা’ই বেশি ছিল।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ধর্ষণের জন্য নারী–পুরুষ অবাধ মেলামেশা, মাদকাসক্তি, যৌন সুড়সুড়িপূর্ণ পরিবেশ ও নারীর পোষাক যেমন দায়ী, তেমনি দায়ী রাষ্ট্র। কারণ, রাষ্ট্র আইনের সঠিক প্রয়োগে ব্যর্থ।

তবে আইনের সঠিক প্রয়োগ করলেও বর্তমান বাংলাদেশের আইন ধর্ষণকে নিবৃত করতে পারবে না, প্রয়োজন আরও কঠোর আইন। আবার শুধু কঠোর আইন প্রয়োগ করলেই যে এই ঘৃণিত অপরাধ চরমভাবে হ্রাস পাবে তেমনটিও নয়। কারণ, আমাদের সমাজের ভিতরে অসংখ্য উপাদান আছে যা ধর্ষণ বা নারীর প্রতি সহিংসতাকে উসকে দেয়৷ আমাদের সমাজে এখানো নারীকে ভোগের সামগ্রী মনে করা হয়৷ তাকে সেভাবে উপস্থাপনও করা হয় বিভিন্ন মাধ্যমে।

তাই, মানুষ যতক্ষণ না পর্যন্ত ধর্মীয় শিক্ষা ও মূল্যবোধ না জাগ্রত হয় ততক্ষণ পর্যন্ত আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে না।

ধর্ষণ প্রতিরোধে চাই, ধর্মীয় মূল্যবোধ, মাদকাসক্তিহীন সমাজ, শালীন পোশাক, উশৃংখল নারীবাদীদের উস্কানীমূলক কর্মকাণ্ড দমন ও ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। প্রকাশ্য মৃত্যুদন্ড বা ফাঁসি।

Leave a comment

Design a site like this with WordPress.com
Get started